Sunday, February 14, 2016


‘ও পলাশ .. ও শিমুল কেন এ মন মোর রাঙালে / জানি না জানি না আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে . . . লতা মুঙ্গেশকারের কালজয়ী এ গান শিমুল-পলাশকে ভীষণ মনে করিয়ে দেয় আমাদের। এমন অজস্র গানের কথায় কিংবা কবিদের কবিতার ছন্দে উঠে এসেছে বসন্তের এই প্রতীক। পলাশ-শিমুল আমাদের বাঙালির ফুল। ফাগুনের-বসন্তের-ভালোবাসার ফুল।
বসন্তের মাতাল সমীরণের টকটকে লাল বর্ণচ্ছটায় মন রাঙ্গানো শিমুল-পলাশ প্রকৃতিতে এনে দেয় নতুন মাত্রা। আমাদের সংস্কৃতির আবাহনে হৃদয়কে সাজায় পলাশ-শিমুলের লাল আভা । শিমুল পলাশেরা ছন্দায়িত করে তোলে মন।
পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ইন্দোনেশিয়া হয়ে শিমুল এসেছে এই বাংলায়। ইংরেজি নাম সিল্ক কটন। বৈজ্ঞানিক নাম বোমবাক্স সিইবা। মালভেসি গোত্রভূক্ত শিমুল ১৮ রকম হারবাল ওষুধে ব্যবহৃত হয়।
পাতাহীন গাছের নগ্ন ডালে প্রকৃতি তার আপন লীলায় মত্ত হয়ে দৃষ্টিকটু গাছে উজ্জ্বল লাল বা গাড় কমলা রঙের পলাশ ফুটিয়ে মানুষের আদর ভালোবাসা বাড়িয়ে তোলে। ফুলে ফলে সমৃদ্ধি বাংলার হাজার হাজার বৃক্ষের মধ্যে পলাশ অন্যতম। রঙেভরা বসন্তে এই ফুলের বিশাল দখলদারিত্ব। যার বৈজ্ঞানিক নাম- Butea monosperma।
দ্বিজেন শর্মা তার বইয়ে লিখেছেন- পলাশ মাঝারি আকারের পত্রমোচী দেশীগাছ। তিনটি পত্র নিয়ে যৌগিকপত্র। ফুল ফোঁটে বসন্তে। ৭.৫ থেকে ১০ সে.মি. আয়তনের শিম ফুলের মতো। বাংলা সাহিত্যে পলাশের প্রভাব অতিশয়।

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষকরে গায়ের মেঠো পথের ধারে অযত্নে অবহেলায় শিমুল পলাশের কোলজুড়ে হেসে ওঠেছে রক্তিম ফুল। তবে সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি বাংলার দৃশ্যপট আস্তে আস্তে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার পথে এই গাছগুলো। আগে গ্রাম গঞ্জের সবখানে এই ফুলের দেখা মিললেও এখন দেখা পাওয়া খুবই দুস্কর। অনেকের মতে এটি ফলজ বৃক্ষ নয় শুধু ফুল। ফুল ও জ্বালানি ছাড়া কোনো কাজে আসে না বলে এই গাছ লাগাতে মানুষের অনীহা। আবহমান বাংলার প্রকৃতির রূপ ও দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে পলাশ -শিমুল গাছ থাকার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
                                                                                                                                              কামাল 

Thursday, January 21, 2016

হার না–মানা ইসরাফিল

২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে গৃহকর্মী মো. ইসরাফিলমো. ইসরাফিল ২০১৫ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (জেএসসি) জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ আর এমনকি! অনেকেই তো পেয়েছে। কিন্তু ইসরাফিলের জন্য এ তো ‘আকাশের চাঁদ’ হাতে পাওয়ার আনন্দ। হবেই না বা কেন—চতুর্থ শ্রেণিতে থাকার সময় শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছিল। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ওই বয়সেই গৃহকর্মীর কাজ নিতে হয় তাকে। বাসার কাজের ফাঁকে পড়ালেখা চালিয়ে এই সাফল্য তার।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় ইসরাফিল ও তাঁর গৃহকর্ত্রী শাহনাজ আক্তারের সঙ্গে। শাহনাজ বলেন, তার এত দূর আসার আদ্যোপান্ত। 
ইসরাফিল তখন সবে চতুর্থ শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছে। একদিন বাড়িতে এসে বাবার মুখে শোনে ‘আর পড়া নয়, এবার কাজ কর’। শুনেই কচি মনে যেন বাজ পড়ল। কিন্তু কিছুই করার নেই। বেঁচে থাকার সংগ্রামটা তখনই টের পেয়েছিল সে। বাবার হাত ধরে কুমিল্লার লাকসামের নগরীপাড়া থেকে চলে এল চট্টগ্রাম শহরে—নতুন পরিচয় গৃহকর্মী। স্থান হয় মেহেদীবাগের এম এম আলী সড়কের শাহনাজ আক্তারের বাসায়।
এখানে এসেও কাজের ফাঁকে পত্রিকা ও গৃহকর্ত্রীর ছেলের বই পেলেই পড়তে থাকে সে। যা চোখ এড়ায় না শাহনাজের। দেখলেন পড়ালেখার প্রতি ইসরাফিলের প্রচণ্ড আগ্রহ। তিনি তার পড়লেখা চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন বাগমনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পায় জিপিএ ৪ দশমিক ৪২। এবার ভর্তি হয় বাগমনিরাম আবদুর রশীদ সিটি করপোরেশন বালক উচ্চবিদ্যালয়ে। উৎসাহ নিয়ে পড়তে থাকে সে। যার ফল জেএসসিতে জিপিএ-৫। এই বিদ্যালয় থেকে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার মধ্যে একজন ইসরাফিল। শাহনাজ বলেন, ইসরাফিলের বাবার নাম রুহুল আমিন। তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে টানাটানির সংসার তাঁর। কুমিল্লার লাকসামে ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। এই থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। একে একে থেমে যেতে থাকে ছেলেদের পড়াশোনা। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলেও বড় ছেলে মো. ইব্রাহিম খলিল কাজ নেয় এক দোকানে। মেজো ছেলে মো. ইসরাফিলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে। তবে ইসরাফিলের ছোট ভাই মো. ইসমাইল হোসেন এখন গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি এবং ছোট বোন আকলিমা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। 
ইসরাফিলের এই ফলে উচ্ছ্বাসিত শাহনাজ বলেন, ‘সুযোগ পেলেই কিছু না কিছু পড়ত সে। তার পড়ালেখা যাতে বন্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা নিই। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার জন্য আলাদা গৃহশিক্ষক রাখি। এর আগে আমার ছেলের গৃহশিক্ষকেরা পড়াত তাকে। ফলাফল প্রকাশের পর এত খুশি হয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ছেলেটি আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।’
শাহনাজ কথাগুলো বলার সময় পাশে বসা ইসরাফিলের চোখেও আনন্দের ঝিলিক। ইসরাফিল বলে, ‘আমার পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু মা-বাবার পড়ানোর সামর্থ্য নেই। সংসারে অভাব। এ কারণে গৃহকর্মীর কাজ নিতে হয়েছে। যখন বাড়ি ছেড়ে চলে আসি, তখন মনে হয়েছিল আর পড়তে পারব না। খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু এখানে এসে সব পাল্টে গেল।’ গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে বলে, ‘তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে সব সময় ছেলের মতো আদর-যত্ন করেন।’
এখানেই থেমে থাকতে চায় না ইসরাফিল। হতে চায় শিক্ষক। এ জন্য অনেক দূর পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন তার।
ছবি: টেকচাঙ্কডট কমছবি: টেকচাঙ্কডট কমসামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে একজন ব্যক্তির ১ হাজার প্রকৃত বন্ধু দূরের কথা, ৫০০ বন্ধুও থাকতে পারে না। বাস্তব অবস্থা হলো, এই সংখ্যা দুই শর বেশি হলেই তা অসম্ভব বলে বিবেচিত হতে পারে।
ফেসবুকে মানুষের বন্ধু সংখ্যা নিয়ে গতানুগতিক ধারার বাইরের একটি গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে। গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন। তাতে এ-ও বলা হয়, ফেসবুকে শুধুই জানাশোনা বা চেনাপরিচয়ের বন্ধু এমন একটি শ্রেণি থাকা দরকার।
রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতা ও মানুষের অবসর সময় বিবেচনা করে দেখা গেছে, গড়পড়তা একজন মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেড় শর বেশি প্রকৃত বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে চলতে পারে না। এর বেশি হওয়ার অর্থ, বন্ধু তালিকায় থাকা অন্যরা কেবলই জানাশোনা বা দু-একবারের দেখায় পরিচিত মানুষ।
যুক্তরাজ্যের বিবর্তনবাদী মনোবিজ্ঞানী রবিন ডানবারের ধারণা অনুসারে তত্ত্বীয়ভাবে ১৫০ সংখ্যাটা ‘ডানবার নম্বর’ বলে পরিচিত। তিনিই নতুন এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। গবেষণা ফলাফলেও ফেসবুকে প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যার ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটিই যৌক্তিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডানবার বলেন, ‘আমাদের গড়ে ৫ জন ঘনিষ্ঠ, ১৫ জন সেরা, ৫০ জন ভালো ও ১৫০ জন সাধারণ বন্ধু রয়েছে। এ ছাড়া, ৫০০ জানাশোনা ও ১৫০০ জন দু-একবারের দেখার মানুষ রয়েছে।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘ফেসবুকে বন্ধু তালিকায় আমাদের ৫০০ বা ১ হাজারও মানুষ থাকতে পারে। কিন্তু এদের মধ্যে এমনও রয়েছে যারা কেবলই জানাশোনা বা স্বল্প সময়ের দেখায় পরিচিত। তাদের সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে কিছুই জানি না।’

Tuesday, January 19, 2016

ক্রীড়া প্রতিবেদক | আপডেট: 
Like
নিজের ফর্ম নিয়ে ভেবে ব্যাটিং নষ্ট করতে চান না সৌম্য। ছবি: প্রথম আলোদেশের হয়ে কী অসাধারণ শুরুটাই না করেছিলেন সৌম্য সরকার। দারুণ এই শুরুর পর নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর্যায়ে এসেই যেন কিছুটা খেই হারিয়ে ফেললেন। ‘এ’ দলের হয়ে ভারত সফর করেও বলার মতো কিছু করতে পারেননি। নভেম্বরে পাঁজরের চোট জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা খেলতেই দিল না। যে বিপিএল এবার দেশি ক্রিকেটারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য স্মরণীয়, সেখানেও ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়েছে তাঁর।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজটা তাই সৌম্যর জন্য বড় ধরনের পরীক্ষাই। প্রথম ম্যাচে রান আউটের খাঁড়ায় পড়ে ইনিংসটাকে বেশি দূর নিতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই স্বরূপে ফিরেছেন। ৪৩ রানের একটা ঝকঝকে ইনিংস খেলে নিজের ফিকে হয়ে আসা ফর্মটাকে কিছুটা হলেও ফেরাতে পেরেছেন এই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান।

তবে ফর্মে ফেরা না-ফেরা নিয়ে ভেবে নিজের সময় নষ্ট করতে চান না তিনি। সৌম্যর ভয়, বেশি বেশি ভাবনা তাঁর ব্যাটিংয়েই না ছাপ ফেলে। নিজের রেকর্ড নিয়ে ভাবেন না জানিয়ে সৌম্য বলেছেন, ‘একটা সময় নিজের ফর্ম নিয়ে খুব ভাবতাম। এখন ভাবি না। এখন যদি সমস্যার কথা চিন্তা করি, তাহলে আমার নিজের মনোযোগ নষ্ট হবে। প্রতিটি ম্যাচ ধরে চিন্তা করছি। দেখছি, নিজের কোনটাতে ভালো হয়। পেছনে তাকাতে চাচ্ছি না। ফর্ম নিয়ে বেশি ভাবলে ব্যাটিং নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’

দলের স্বার্থে নিজের ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তনকে কোনো সমস্যা মনে করেন না সৌম্য। এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত হবে জানিয়ে বলেছেন, ‘শুরুটা করেছিলাম ওয়ান ডাউনে। কিন্তু এখন ওপেন করছি। কীভাবে ওপেন করব, সেটা নিয়ে ভাবি। তবে এটা বলতে পারি, দলের স্বার্থে যেকোনো জায়গাতেই ব্যাট করতে পারি আমি। এ নিয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

নিজের ইনিংস যেদিন বড় করতে পেরেছেন, সেদিন বাংলাদেশকে জয় নিয়ে ভাবতে হয় না। পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেটা খুব ভালো করেই অনুধাবন করা গেছে। কিন্তু সৌম্যকে নিয়ে সবারই আক্ষেপ তিনি নিজের ইনিংস বড় করতে পারেন না। এ নিয়ে সৌম্যর নিজের কী কোনো আক্ষেপ আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তাঁর সহজ স্বীকারোক্তি ইঙ্গিত দিল, ব্যাপারটা ভাবায় তাঁকে, ‘আক্ষেপ তো সবারই থাকে। এখন হয়তো বা আক্ষেপ হচ্ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতে গেলে হয়তো হবে। ক্যারিয়ার শেষে পেছন ফিরে তাকালে এই আক্ষেপগুলো বেশি করেই হবে।’
কিন্তু এখানেও দেখা দিলেন দল অন্ত প্রাণ সৌম্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই শেষ দুটি ম্যাচে সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েও পারেননি। একটিতে ৮৮ রানে অপরাজিত ছিলেন, আরেকটিতে ৯০ করে আউট হয়েছেন। কিন্তু দুটি ম্যাচই তো জিতেছে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি পেয়ে হারারা চেয়ে সেঞ্চুরি না-পেয়ে জেতাই ভালো। সৌম্য তাই সামনের দিকে তাকিয়ে, ‘এই মুহূর্তে এসব নিয়ে ভাবছি না। লক্ষ্য আমার সামনের দিকেই। সামনের সুযোগগুলো যেন কাজে লাগাতে পারি, আর লক্ষ্য এটাই।’