হার না–মানা ইসরাফিল
মো. ইসরাফিল ২০১৫ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (জেএসসি) জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ আর এমনকি! অনেকেই তো পেয়েছে। কিন্তু ইসরাফিলের জন্য এ তো ‘আকাশের চাঁদ’ হাতে পাওয়ার আনন্দ। হবেই না বা কেন—চতুর্থ শ্রেণিতে থাকার সময় শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছিল। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে ওই বয়সেই গৃহকর্মীর কাজ নিতে হয় তাকে। বাসার কাজের ফাঁকে পড়ালেখা চালিয়ে এই সাফল্য তার।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় ইসরাফিল ও তাঁর গৃহকর্ত্রী শাহনাজ আক্তারের সঙ্গে। শাহনাজ বলেন, তার এত দূর আসার আদ্যোপান্ত।
ইসরাফিল তখন সবে চতুর্থ শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছে। একদিন বাড়িতে এসে বাবার মুখে শোনে ‘আর পড়া নয়, এবার কাজ কর’। শুনেই কচি মনে যেন বাজ পড়ল। কিন্তু কিছুই করার নেই। বেঁচে থাকার সংগ্রামটা তখনই টের পেয়েছিল সে। বাবার হাত ধরে কুমিল্লার লাকসামের নগরীপাড়া থেকে চলে এল চট্টগ্রাম শহরে—নতুন পরিচয় গৃহকর্মী। স্থান হয় মেহেদীবাগের এম এম আলী সড়কের শাহনাজ আক্তারের বাসায়।
এখানে এসেও কাজের ফাঁকে পত্রিকা ও গৃহকর্ত্রীর ছেলের বই পেলেই পড়তে থাকে সে। যা চোখ এড়ায় না শাহনাজের। দেখলেন পড়ালেখার প্রতি ইসরাফিলের প্রচণ্ড আগ্রহ। তিনি তার পড়লেখা চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন বাগমনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পায় জিপিএ ৪ দশমিক ৪২। এবার ভর্তি হয় বাগমনিরাম আবদুর রশীদ সিটি করপোরেশন বালক উচ্চবিদ্যালয়ে। উৎসাহ নিয়ে পড়তে থাকে সে। যার ফল জেএসসিতে জিপিএ-৫। এই বিদ্যালয় থেকে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার মধ্যে একজন ইসরাফিল। শাহনাজ বলেন, ইসরাফিলের বাবার নাম রুহুল আমিন। তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে টানাটানির সংসার তাঁর। কুমিল্লার লাকসামে ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। এই থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। একে একে থেমে যেতে থাকে ছেলেদের পড়াশোনা। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলেও বড় ছেলে মো. ইব্রাহিম খলিল কাজ নেয় এক দোকানে। মেজো ছেলে মো. ইসরাফিলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে। তবে ইসরাফিলের ছোট ভাই মো. ইসমাইল হোসেন এখন গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি এবং ছোট বোন আকলিমা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
ইসরাফিলের এই ফলে উচ্ছ্বাসিত শাহনাজ বলেন, ‘সুযোগ পেলেই কিছু না কিছু পড়ত সে। তার পড়ালেখা যাতে বন্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা নিই। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার জন্য আলাদা গৃহশিক্ষক রাখি। এর আগে আমার ছেলের গৃহশিক্ষকেরা পড়াত তাকে। ফলাফল প্রকাশের পর এত খুশি হয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ছেলেটি আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।’
শাহনাজ কথাগুলো বলার সময় পাশে বসা ইসরাফিলের চোখেও আনন্দের ঝিলিক। ইসরাফিল বলে, ‘আমার পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু মা-বাবার পড়ানোর সামর্থ্য নেই। সংসারে অভাব। এ কারণে গৃহকর্মীর কাজ নিতে হয়েছে। যখন বাড়ি ছেড়ে চলে আসি, তখন মনে হয়েছিল আর পড়তে পারব না। খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু এখানে এসে সব পাল্টে গেল।’ গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে বলে, ‘তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে সব সময় ছেলের মতো আদর-যত্ন করেন।’
এখানেই থেমে থাকতে চায় না ইসরাফিল। হতে চায় শিক্ষক। এ জন্য অনেক দূর পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন তার।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলো কার্যালয়ে কথা হয় ইসরাফিল ও তাঁর গৃহকর্ত্রী শাহনাজ আক্তারের সঙ্গে। শাহনাজ বলেন, তার এত দূর আসার আদ্যোপান্ত।
ইসরাফিল তখন সবে চতুর্থ শ্রেণির প্রথম সাময়িক পরীক্ষা দিয়েছে। একদিন বাড়িতে এসে বাবার মুখে শোনে ‘আর পড়া নয়, এবার কাজ কর’। শুনেই কচি মনে যেন বাজ পড়ল। কিন্তু কিছুই করার নেই। বেঁচে থাকার সংগ্রামটা তখনই টের পেয়েছিল সে। বাবার হাত ধরে কুমিল্লার লাকসামের নগরীপাড়া থেকে চলে এল চট্টগ্রাম শহরে—নতুন পরিচয় গৃহকর্মী। স্থান হয় মেহেদীবাগের এম এম আলী সড়কের শাহনাজ আক্তারের বাসায়।
এখানে এসেও কাজের ফাঁকে পত্রিকা ও গৃহকর্ত্রীর ছেলের বই পেলেই পড়তে থাকে সে। যা চোখ এড়ায় না শাহনাজের। দেখলেন পড়ালেখার প্রতি ইসরাফিলের প্রচণ্ড আগ্রহ। তিনি তার পড়লেখা চালিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেন তিনি। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন বাগমনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পায় জিপিএ ৪ দশমিক ৪২। এবার ভর্তি হয় বাগমনিরাম আবদুর রশীদ সিটি করপোরেশন বালক উচ্চবিদ্যালয়ে। উৎসাহ নিয়ে পড়তে থাকে সে। যার ফল জেএসসিতে জিপিএ-৫। এই বিদ্যালয় থেকে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার মধ্যে একজন ইসরাফিল। শাহনাজ বলেন, ইসরাফিলের বাবার নাম রুহুল আমিন। তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে টানাটানির সংসার তাঁর। কুমিল্লার লাকসামে ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। এই থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। একে একে থেমে যেতে থাকে ছেলেদের পড়াশোনা। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলেও বড় ছেলে মো. ইব্রাহিম খলিল কাজ নেয় এক দোকানে। মেজো ছেলে মো. ইসরাফিলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে। তবে ইসরাফিলের ছোট ভাই মো. ইসমাইল হোসেন এখন গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি এবং ছোট বোন আকলিমা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
ইসরাফিলের এই ফলে উচ্ছ্বাসিত শাহনাজ বলেন, ‘সুযোগ পেলেই কিছু না কিছু পড়ত সে। তার পড়ালেখা যাতে বন্ধ না হয়, সে ব্যবস্থা নিই। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার জন্য আলাদা গৃহশিক্ষক রাখি। এর আগে আমার ছেলের গৃহশিক্ষকেরা পড়াত তাকে। ফলাফল প্রকাশের পর এত খুশি হয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ছেলেটি আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছে।’
শাহনাজ কথাগুলো বলার সময় পাশে বসা ইসরাফিলের চোখেও আনন্দের ঝিলিক। ইসরাফিল বলে, ‘আমার পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু মা-বাবার পড়ানোর সামর্থ্য নেই। সংসারে অভাব। এ কারণে গৃহকর্মীর কাজ নিতে হয়েছে। যখন বাড়ি ছেড়ে চলে আসি, তখন মনে হয়েছিল আর পড়তে পারব না। খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু এখানে এসে সব পাল্টে গেল।’ গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে বলে, ‘তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে সব সময় ছেলের মতো আদর-যত্ন করেন।’
এখানেই থেমে থাকতে চায় না ইসরাফিল। হতে চায় শিক্ষক। এ জন্য অনেক দূর পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন তার।
No comments:
Post a Comment